দোকানের তাকে তাকে থরে থরে সাজানো বই, খাতা, কলমসহ বিভিন্ন পণ্য। কিন্তু কোনো দোকানদার নেই, নেই সিসি ক্যামেরা বা গার্ড। পণ্যের গায়ে লেখা থাকে দাম, সেটা দেখেই নির্ধারিত স্থানে রেখে দেন মূল্য। ইচ্ছে করলেই মূল্য না দিয়ে বের হওয়া যায়। কিন্তু সত্ মানুষ তৈরির এই মিশন সফল। সারাদেশের সততা স্টোরগুলো এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান। দেশে এখন পর্যন্ত অসংখ্য সততা স্টোর গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে থেকে কয়েকটি বিক্রয় কেন্দ্রের গল্প তুলে ধরা হলো ভিন্নচোখের এই আয়োজনে—
সফলতা পেয়েছে ‘সততা স্টোর’
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সততা স্টোরের সূচনা আরো আগে হলেও সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চালু হয় গত বছরের ২০ আগস্ট। খুলনা বিভাগীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. আবুল হোসেন এই সততা স্টোর উদ্বোধন করেন। মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততার বীজ বোপণ করার লক্ষ্যে স্টোরটি স্থাপন করা হয়। সততা স্টোরটির ১ বছর পূর্ণ হলেও এখনো স্কুলটিতে গিয়ে সততা স্টোরে শিক্ষার্থীদের কেনাকাটার বেশ ব্যস্ত মুহূর্ত লক্ষ্য করা যায়।
সততা স্টোর সম্পর্কে সোনাবাড়িয়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতার আসাদুজ্জামান (চান্দু) বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের সহযোগিতায় আমরা স্কুলে সততা স্টোর চালু করেছি। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা খাতা-কলম, কেক, বিস্কুট, জুস, টকলেটসহ প্রায় ১৫ রকমের পণ্য ক্রয় করতে পারে। প্রতিটি পণ্যে নির্ধারিত মূল্য লেখা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা পণ্য ক্রয় শেষে মূল্য নির্ধারিত বক্সে পরিশোধ করে থাকে। দোকানটি প্রায় ১ বছরে পূর্ণ করেছে। এরমধ্যে সততা স্টোরের সাফল্য দেখে আমরা বেশ অবাক হয়েছি। শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্য প্রতিনিয়তই আমাদের মুগ্ধ করছে।’
সততা স্টোরের তত্ত্বাধায়ক স্কুলের সহকারি শিক্ষক স্বপন কুমার চৌধুরী ও সেলিম রেজা বলেন, ‘প্রতিদিন বহু শিক্ষার্থী সততা স্টোর থেকে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করছে। বর্তমান বাজার মূল্য ছাড়া বেশ কম মূল্যে শিক্ষার্থীরা সেসব পণ্য পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য এমন সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পেরে আমরাও খুব আনন্দিত।’
সততা স্টোর সম্পর্কে পূরবী রায়, সেহাব বাবু, সততা পারভীন, আসিফ ইকবাল ও স্বাধীনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাষা, ‘আমাদের স্কুলে সততা স্টোর চালু হওয়ায় আমরা বেশ আনন্দিত। আমাদের প্রয়োজনীয় সব খাতা-কলমসহ নানা জিনিস আমরা এখন খুব সহজ ও স্বল্প মূল্যে সংগ্রহ করতে পারছি।’
কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ‘সোনাবাড়িয়া হাইস্কুলের সততা স্টোরের সাফল্যের কথা শুনে আমিও অভিভূত। আশা করি এই সততা স্টোরের শিক্ষা পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিজীবনেও গুরুত্ব বহন করবে।’
সততা, নৈতিকতা জাগাতে ‘সততা স্টোর’
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
শৈশব থেকে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি মানবিক গুণসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে পঞ্চগড়ে চালু করা হয়েছে সততা স্টোর। সেখানে নেই কোনো বিক্রেতা, ক্রেতা শুধুই শিক্ষার্থীরা। দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যত্ গড়ে তুলতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ চালু করেছে এমনই একটি স্টোর। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা, নৈতিকতা জাগাতে ও দুর্নীতিবিরোধী মানসিকতা তৈরির শিক্ষা দেওয়াই এ স্টোরের লক্ষ্য। বিদ্যালয়ের একটি পুরোনো ভবনের একটি তাক ও একটি টেবিলে সাজানো রয়েছে খাতা, কলম, পেন্সিল, বিস্কুট, চানাচুর, চকলেট, চুইংগাম, আচারসহ ৪০টিরও বেশি পণ্যসামগ্রী সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দেয়ালে টাঙানো রয়েছে পণ্যগুলোর দামের তালিকা। শিক্ষার্থীরা তালিকা দেখে সেই পণ্যের দাম ক্যাশবাক্সে রেখে যাচ্ছে।
লাভের টাকায় সহযোগিতা
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৫ হাজার টাকা দিয়ে এই সততা স্টোর চালু করা হয়। দৈনিক ৪/৫শ’ টাকার মালামাল বিক্রি হয়। লাভের টাকা দিয়ে গরিব শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের পোশাক, জুতা, ওষুধসহ নানা সহায়তা দেওয়া হয়।
এখানেই আছে একটি লাইব্রেরি কর্ণার। যেখানে স্কুল শুরুর আগে বা পরে বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পণ্য বিক্রির সেই টাকায় পুনরায় পণ্য ক্রয় করা হবে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে সততা স্টোর উদ্বোধন করেন। তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সানিউল ফেরদৌসের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম শাহিন, সাবেক কমান্ডার কাজী মাহাবুবুর রহমান, স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. এমদাদুল হক, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. আজিজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র সেন, তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহুরুল হকসহ বিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিশাত তাবাসসুম আঁচল, মোবাশ্বিরা তাসনীম ও জারিন রাজিয়ার কথায়, ‘আগে রোদ ও বৃষ্টির মধ্যে বাইরের দোকানে গিয়ে খাতা-কলম ও খাবার আনতে হতো। সেখানে দামও বেশি নিতো। এখন স্কুলেই সব পণ্য পাচ্ছি। তাও বাইরের চেয়ে অনেক কম দামে পাচ্ছি।’
উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা
কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহমিদা তুবাসসিম রওনক ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনিমা তাবাসসুম বিথী জানায়, সততা স্টোরে লেখাপড়ার সকল প্রকার উপকরণ তো আছেই, টিফিনের সময় শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীও পাওয়া যায়। এছাড়া বয়ঃসন্ধিজনীত স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন সামগ্রীও পাওয়া যায়। এটা একটা ব্যতিক্রম উদ্যোগ। ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুর খাদিজা ও সুমাইয়া জাহান জানায়, এমন দোকান দেখে তাদের খুব ভালো লাগছে। তদারকির কেউ নেই। তবু কেউ দাম পরিশোধ না করে আসছে না। এটাই ভালো লেগেছে সবচেয়ে বেশি।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘হাতে-কলমে শিক্ষাই হলো প্রকৃত শিক্ষা। শিশুদের প্রকৃত নৈতিক শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের লোভ সংবরণ, সত্, আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সততা স্টোর দেওয়া হয়েছে।
সততার পরীক্ষায় তারা জিততে চায়
চট্টগ্রাম অফিস
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম খাতা ও কলম কিনলো। দোকানে কোনো দোকানদার নেই। তবে নির্ধারিত মূল্য বক্সে পরিশোধ করে এই বালক। আব্দুর রহিমের মতো শতশত শিক্ষার্থী প্রতিদিন এভাবেই নিজেদের সততার পরিচয় দিচ্ছে। চট্টগ্রামের কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে গতবছরের জুলাইয়ে চালু হয় ‘সততা স্টোর’। সেসময় থেকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনেছে এই দোকান থেকে। আর এসব পণ্য কিনতে দামের পাশাপাশি তাদের দিতে হয়েছে সততা এবং বিবেকের পরীক্ষা। কারণ দোকানে কোনো সেলসম্যান বা বিক্রয়কর্মী নেই। নেই কোনো গার্ড বা সিসিটিভি।
পণ্যের দাম মেটানোর কায়দাটা একেবারেই অন্যরকম। পণ্যের তালিকার সঙ্গে মূল্য লেখা আছে, সেই অনুযায়ী এর মূল্য নিজেকেই পরিশোধ করতে হবে পাশে রাখা একটি বক্সে। সঙ্গে একটি এন্ট্রি খাতায় নিজের নাম এবং পণ্যের নামটি এন্ট্রি করতে হবে। তদারকির কেউ নেই, থাকবেও না। তালিকায় থাকছে খাতা, কলম, পেন্সিল, রাবার, স্কেল, জ্যামিতি বক্স, রঙ-পেন্সিল, বিস্কুট, চিপস, জুস, মিনারেল ওয়াটার, লজেন্স, ওয়েফার, ছোট বইসহ বিভিন্ন পণ্য।
বলা যায়, গোটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি সততা চর্চা কেন্দ্র। যে কেউ চাইলেই এখান থেকে মূল্য পরিশোধ না করে চুপিচুপি পণ্য নিয়ে চলে যেতে পারবে। তবে তারা সেটা কখনো করবে না বলে জানিয়েছে। কারণ এই সততার পরীক্ষায় তারা হারতে চায় না। তারা জিততে চায়। আর এর আয়োজকদের ভাষ্য, একটি সত্, সমৃদ্ধ এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও দেশ গঠনে আমাদের এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে। তাদের মধ্যে সততার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আর এ জন্যই তাদের এই আয়োজন। এই প্রকল্পটি সফল হলে ভবিষ্যত্ বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্রই পাল্টে যাবে বলে তাদের মত।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন জানান, ব্যবসা নয়, বরং সততা চর্চার উদ্দেশ্যেই মূলত এই সততা স্টোরের যাত্রা। শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের তালিকা প্রয়োজনে আরো বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
আরো একটু সন্দেহপ্রবণ হই!
ছাত্ররা সঠিক সময়ে ঘরে ফিরেছে আর আমাদের এই উপলব্ধি দিয়ে গেছে যে, আমাদের শিক্ষিত হতে আরো দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা এখন শুধুমাত্র সামজেই বসবাস করি না, ইন্টারনেটের মতো আরো একটি বড় জগতেও বসবাস করি। যেখানে বসবাসে কায়দাকানুন শেখা আসলেই জরুরি
চন্দন বর্মণ
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ। অনেকগুলো ক্ষোভের আগুন এই বিদ্রোহের সূচনা করে। তারমধ্যে একটি অন্যতম ক্ষোভের সৃষ্টি একটি গুজবের মাধ্যমে। কার্তুজেশুকর এবং গরুর চর্বি। উপমহাদেশের ধর্মপ্রাণ হিন্দু ও মুসলমানদের ক্ষেপিয়ে দিতে এর চেয়ে বড় অস্ত্র বুঝি আর হয় না। প্রায় ১ বছর ধরে চলমান এই আন্দোলনের পরিণাম সিপাহীদের দিতে হয় নির্মমভাবে। সিপাহী বিদ্রোহ নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল, কিন্তু এর গোড়ায় ছিল গুজবের গলদ। তবে সময়ের ব্যবধানে শীতল হয়ে পড়ে এই আন্দোলনের আগুন এবং ব্যর্থ হয় মূল উদ্দেশ্য।
চলতি বছরের ২৮ ও ২৯ জুলাই থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শুরু হওয়া কিশোর আন্দোলন তেমনি কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল। শুরু থেকে এই শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনের যৌক্তিক দাবি প্রশংসা আর সমর্থন পায় প্রায় সব শ্রেণির মানুষের। কিশোররা দেখিয়ে দেয় তরুণ প্রজন্মের দেশপ্রেম আছে, স্বপ্ন দেখার এখনো সময় আছে। আমরা চাইলেই পালিশ করে দিতে পারি ঘুণে ধরা পুরোনো প্রথাকে।
সময়ের ব্যবধানে এই ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে পড়ে স্বার্থ। ছাত্রদের উদ্যাম স্পৃহাকে ব্যবহার করে রটানো হয় নানারকম মিথ্যে তথ্য এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সেটি ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ফটোশপ করে বিকৃত করা ছবি, শব্দের মারপ্যাচে উদ্দেশ্য প্রণোদিত শিরোনাম, ভুল ক্যাপশনের ছবি, এমনকি ক্যামেরার সামনে কান্নাকাটির অভিনয়, কতভাবেই না ভূয়া খবর ছড়ালো সেই ক’দিন। কিশোররা যখন আন্দোলনে দিশেহারা তখন বড়রা ব্যস্ত ফেসবুকের পাতায় ভুল খবর ছড়ানোয়। কেউ কেউ যদি ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে একটু কথা বলতে চাইলে তাকে চামচা উপাধি দিয়ে হেনস্তা করে ছেড়েছে বাকি সবাই।
ছাত্ররা সঠিক সময়ে ঘরে ফিরেছে আর আমাদের এই উপলব্ধি দিয়ে গেছে যে, আমাদের শিক্ষিত হতে আরো দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা এখন শুধুমাত্র সামজেই বসবাস করি না, ইন্টারনেটের মতো আরো একটি বড় জগতেও বসবাস করি। যেখানে বসবাসে কায়দাকানুন শেখা আসলেই জরুরি।
ছাত্র আন্দোলনের ষষ্ঠদিন থেকে সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সাকমিড)-এর পক্ষ থেকে আমরা ঢাকা শহরের স্বনামধন্য ১০টি স্কুলে নবম শ্রেণির ২০জন করে শিক্ষার্থী নিয়ে ‘গণমাধ্যম স্বাক্ষরতা বা মিডিয়া লিটারেসি’ বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করি। এই কর্মসূচিতে আমাদের সহায়তা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশনের এটুআই (এক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্প ও নেদারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড।
গভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে শুরু করে এই কার্যক্রম, একে একে ক্যাম্ব্রিয়ান স্কুল, সেন্ট জোসেফ, ঢাকা রেসিডেনশিয়াল, নিউ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, লেক সার্কাস গার্লস স্কুল, বাসাবো গার্লস স্কুল, শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিতার্স উচ্চ বিদ্যালয় এবং সর্বশেষ মতিঝিল গভমেন্ট বয়েস স্কুলের মাধ্যমে শেষ হয় এই কার্যক্রম। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে প্রতিটি স্কুলে মিডিয়া লিটারেসি গ্রুপ তৈরি করে ২ জন করে লিডার নির্বাচন করা হয়। এই গ্রুপগুলো নিজ নিজ স্কুলে গণমাধ্যম স্বাক্ষরতা বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করবে।
ঢাক শহরের স্বনামধন্য সব স্কুলের সব শিক্ষার্থী অবাক হয়ে জেনেছিল কিভাবে তারা ভুল সংবাদের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাদের চোখ দেখে মনে হচ্ছিল তাদের মনের ঘরে একটি একটি করে আলো জ্বলে উঠছে। তাদের যখন দেখানোও হচ্ছিল ফটোশপ করা ছবি, ভুল ক্যাপশনের ছবি, শিরোনামের মারপ্যাচ, স্ক্রিনশটের ধোকা, মিডিয়ার মালিকানা এবং বেশি সাস্ক্রাইবার পাওয়ার লোভ কিভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের ভুল তথ্য দিয়ে বোকা বানিয়ে রাখছে। তখন একজন শিক্ষার্থী আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘আপু, তাহলে কাকে বিশ্বাস করবো, কিভাবে বিশ্বাস করবো?’ বললাম, তথ্যের অবাধ প্রবাহের যুগে আমাদের অনেক বেশি সন্দেহপ্রবণ হতে হবে। কিছু বিশ্বাস করার আগে, বিশ্বাস করে আরেকজনের সাথে শেয়ার করে ফেলার আগে তিনবার ভাবতে হবে, সত্যতা যাচাই করে নিতে হবে।
কথায় আছে, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।’—এই কথা মেনে নেওয়ার সময় বুঝি ফুরিয়ে এসেছে। কান নিয়েছে চিলে শুনে চিলের পেছনে দৌড়ানোর আগে নিজের মাথার দু-পাশে হাত দিয়ে দেখতে হবে আসলে কান খোয়া গেছে কি-না, আর কান যদি জায়গামতো থাকেও সেটি নিজের কানটাই কি-না তা নিশ্চিত হতে হবে!